চামড়া খাতে প্রণোদনা আরও ৫ বছর


চামড়াজাত পণ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে আগামী পাঁচ বছর এ খাতে আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প থেকে কাঙিক্ষত রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আর্থিক প্রণোদনা আরও অন্তত পাঁচ বছর অব্যাহত থাকবে। সব রফতানি খাতের জন্য সমান সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। যেসব বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দূর করা হবে।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
চামড়া খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এলএফএমইএবি (লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এই ‘সোর্সিং শো’র আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর বর্ধিত প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মান ও এলডাব্লিউজি সনদ অর্জন উপযোগী কম্পোজিট চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা কারখানা গড়ে তুলতে কমপক্ষে ১৫০ একর জায়গা বরাদ্দ দেব এবং ইতোমধ্যে আমরা সে জায়গা দেখেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত অর্থবছর চামড়া খাত থেকে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়। আমাদের ক্রমবর্ধমান কাঁচা চামড়া সরবরাহের পুরোটাই ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরি করে রফতানি করতে পারলে, আমরা অনায়াসে ২০২২ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করতে সক্ষম হবো।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রায় সাড়ে ১০ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে আমাদের রফতানি আয় যেখানে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল তা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ গুণের বেশি বেড়ে ৪৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে আমদানি ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬২ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বর্তমানে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আমাদের বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ হয়েছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আইএমএফ-এর সর্বশেষ জিডিপির র্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশ পিপিপির ভিত্তিতে বিশ্বের ২৯তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী- বাংলাদেশ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ।
তিনি বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে। প্রকৃতপক্ষে তা প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর থেকে বেশিই হয়তো আমরা অর্জনে সক্ষম হব বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস রফতানির এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবং রফতানির বহুমুখীকরণ করতে পারলে আমাদের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সালে রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এবং এলএফএমইএবির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।