নিউইয়র্কে দুই দিনব্যাপী উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব অনুষ্ঠিত

উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনব্যাপী উত্তর অ্যামেরিকা রবীন্দ্র উৎসব। ৭ মে রোববার উৎসবের শেষ দিন সকাল থেকেই দর্শকরা যোগ দেন জামাইকার পারফরমিং আর্টস সেন্টারে। দু’দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ ড. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আটর্স -বিপার ক্ষুদে শিল্পীরা যখন ইংরেজিতে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের তাসের দেশ মঞ্চায়ন করে সমস্ত হলে তখন পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছিল। প্রবাসে দেশের সংস্কৃতির চর্চায় ও পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নাড়ি থেকে যে বাঙালি বিচ্ছিন্ন হয়নি, এর প্রমাণ নতুন প্রজন্মের এই পরিশীলিত উপস্থাপনা।

এই রবীন্দ্র উৎসবে এভাবেই একের পর এক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন দর্শকরা। অধিকাংশ সময়েই জামাইকা পার্ফর্মিং আর্ট সেন্টারের মিলনায়তনে তিল ধরার ঠাই ছিল না। অনুষ্ঠানে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মভূষণপ্রাপ্ত নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি ভিডিও বার্তায় তার বক্তব্য দেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম এবং ভারতের কনসাল জেনারেল রণধীর জয়সুয়াল। যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গ সম্মেলনখ্যাত ভারতীয় বাঙালিদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ বা কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-সিএবি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠান বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুক্ত হয়েছেন।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থিত ছিলেন একুশ পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাষাবিজ্ঞানী ড. পবিত্র সরকার, ভারতীয় লেখক আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। এছাড়াও ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, জার্মানী, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত: ২৫টি অঙ্গরাজ্য থেকে কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা অংশ নেন। বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের অন্তত: ১৫টি সংগঠন উৎসবে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভাষাভাষী বিদেশি সংগঠনও পারফর্ম করেন।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব আঁকা ছবিও প্রদর্শন হয়। উৎসব প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয় রবি ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ তর্কে-বিতর্কে এবং বিদেশিদের চোখে রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক তিনটি সেমিনারসহ ‘রক্ত করবী’, ‘ভানু সিংহের পদাবলী’ গীতি নৃত্যনাট্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলো নিয়ে প্রীতি বিতর্ক, রবি ঠাকুরের জীবনে নারীর ভূমিকা শীর্ষক দুটি অনুষ্ঠান ‘ওরা সন্ধ্যার মেঘমালা’ এবং ‘কার মিলন চাও হে “ দর্শকরা উপভোগ করেন।

সবশেষে সন্ধ্যায় একক রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাজারো দর্শক শুনেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রচলিত ও অপরচিত গান। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গানের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলেছেন রবীন্দ্র রচনায় পূর্ব বাংলার প্রভাব নিয়ে। পূর্ব বাংলায় অবস্থানের আগে রবীন্দ্রনাথ ভক্তির গানই বেশি রচনা করেছেন উল্লেখ করে রবীন্দ্র রচনায় প্রকৃতির উপাদানের বাঁক পথকে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
সফল অনুষ্ঠানের শেষ দিনে রবীন্দ্র উৎসবের আহ্বায়ক হাসানুজ্জমান সাকী সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, সকলের সমর্থন না পেলে দূর প্রবাসে এমন ব্যাপক অনুষ্ঠান সফল করা সম্ভব হতো না।

নিউইয়র্কে গ্রীষ্মের আগমনীতে চমৎকার আবহাওয়ায় দূরের রাজ্য থেকেও অনেকেই ছুটে এসেছেন রবীন্দ্র উৎসবে যোগ দিতে। অনুষ্ঠানে বিষয় বাহুল্য থাকলেও সবাইকে সম্পৃক্ত করে এমন সম্মেলনটি সফল করার জন্য আয়োজকদের আন্তিকতার কোন ঘাটতি ছিল না। কোন কোন উপস্থাপকের বিরক্তিকর উপস্থাপনা নিয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করলেও সার্বিকভাবে একটি মান সম্পন্ন অনুষ্ঠান করার জন্য উপস্থিত দর্শকরা উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করেছেন। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে উত্তর আমেরিকায় এর আগে বাংলাদেশীদের এমন ব্যাপক উৎসব আগে আর কখনো হয়নি।