ডলারের দাম বৃদ্ধির সুফল মিলবে তো

ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। কারও কাছে থাকা ১ লাখ টাকার মান এখন ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকায় নেমেছে। এ কারণে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে  গেছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঘোষণায় ছোট ও মাঝারি ধরনের আমদানিকারদেরই এলসি পেমেন্টে অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে কোটি টাকার ওপরে। বড় আমদানিকারকদের খরচ আরও বেড়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে আলভীনা টেক্সটাইলের মালিক এস এম ওবায়দুল্লাহ বলেন, বুধবার (৮ মে) আমার একটি এলসি পেমেন্ট করার বাধ্যবাধকতা ছিল। ওইদিন সকালে আমাকে ব্যাংক থেকে বলা হলো, বিকালে পেমেন্ট করতে হবে। তবে সকালে যে পরিমাণ টাকা চেয়েছিল বিকালে  তার চেয়ে আরও ৩০ লাখ টাকা বেশি পেমেন্ট করতে হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই এক সিদ্ধান্তে আমার প্রায় এক কোটি টাকা খরচ বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বিনিময় হার নির্ধারণের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করায় আপতত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের ওপর। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এতো দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেঁধে রেখেছিলো। অর্থনীতিবিদরা এতদিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রফতানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। প্রতি ডলার  ১১৭ টাকায় উঠানোর ফলে রফতানিকারকেরা প্রতি ডলার আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে তারা আরও বেশি উৎসাহী হন। একইভাবে প্রবাসীরাও রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারের বিপরীতে ৭ টাকা বেশি পাবেন।

তবে এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এর ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন এখনও তাই করছেন। তারা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না।

টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্রমণ ও বিদেশি শিক্ষার ব্যয় বেড়ে যাবে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়।

চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন এমন মতিঝিল খোলা বাজারে এসেছিলেন খুচরা ডলার কিনতে। তিনি বলেন, কমপক্ষে ৬টি মানি এক্সচেঞ্জে ঘুরলাম কেউ ডলার বিক্রি করলো না। এখানে কয়েকটি ব্যাংকে গেলাম, ভিসা পাসপোর্ট দেখালাম। তারপরও বললো সরাসরি ডলার দেওয়া যাবে না।

খোলাবাজারের পাশাপাশি ব্যাংকের এলসি খোলার দরও বেড়েছে আড়াই থেকে তিন টাকা। বুধবার ১১৫ টাকায় এলসি করছিল এরকম ব্যাংক বৃহস্পতিবার ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা দর নিয়েছে বলে জানা গেছে।

খোলাবাজারের নগদ ডলার বেচাকেনা করেন যে ব্যবসায়ীরা তারা জানিযেছেন, এখন একান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ ডলার কিনছেন না। ডলার কত টাকায় স্থির হবে, এটা বোঝার জন্য আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মতিঝিলের একটি মানি চেঞ্জারের মালিক বলেন, ১১৮ টাকার ডলার এক দিনেই ১২৩ টাকায় উঠে গেল। কেউ কেউ ১২৫ টাকাতেও বিক্রি করছে। মনে হচ্ছে দাম আরও বাড়বে। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর কাছে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার মজুত রয়েছে।

বেশ কয়েক মাস ধরেই ডলারের বাড়তি দামের কারণে খুচরা বাজারে বেড়েছে আমদানি করা নিত্যপণ্যের দাম। দেশে খাদ্যশস্য এবং অন্য পণ্য আমদানি করতে হয় পুরোপুরি জোগান মেটাতে। যে কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামে ডলারের সবচেয়ে বড় প্রভাব থাকে। বিশেষ করে চিনি, পাম তেল, সয়াবিন তেল, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, আদা, মরিচ, গম, চাল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, তেলবীজ রয়েছে শীর্ষ খাদ্যসামগ্রী আমদানির মধ্যে। এছাড়া সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাবান, শ্যাম্পু থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বাড়বে।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছেন আমদানিকারকরা। ডলারের অপ্রতুলতায় বেশিরভাগ ব্যাংকই এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে। এ প্রবণতা বাড়বে। আমদানি কমে গেলে পণ্যের দামও বাড়বে।