ঋণসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ৩ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান

বকেয়া স্টুডেন্ট লোন বা ছাত্র ঋণসাগরে ৩ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান হাবুডুবু খাচ্ছে। বাধ্যতামূলক নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ এবং ছাত্রঋণের সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডলার মওকুফ বিলোপ পরিকল্পনার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সুচিন্তিত মতামত সাপেক্ষে ঋণগ্রহীতা ৩ কোটি ৭০ লাখ ছাত্রছাত্রীর অন্তর রাবণের চিতাসম অশান্তির অনলে অহর্নিশ জ্বলেপুড়ে খাক হচ্ছে। আবার ছাত্রঋণ মওকুফ প্রোগ্রাম (স্টুডেন্ট লোন রিলিফ কর্মসূচি) বাতিল বিল সিনেটে পাস হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিলটিতে ভেটো প্রয়োগ করায় ঋণগ্রহীতা ছাত্রছাত্রীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের মার্চ থেকে আইনি বৈধতা এবং নির্বাহী আদেশের কারণে ঋণগ্রহীতা ছাত্রছাত্রীদের ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়নি। মে মাসে এডুকেশন সেক্রেটারি মিগুয়েল কার্ডোনা নিশ্চিত করেছিলেন, ৩০ জুনের পর ৬০ দিনের মধ্যে ছাত্রঋণ পুনরায় পরিশোধ শুরু করার ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসন নির্দেশ প্রদান করবে। মূলত ঋণের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ এড়ানোর লক্ষ্যে কংগ্রেশনাল রিপাবলিকান এবং বাইডেনের মধ্যকার সমঝোতার অংশ হিসেবেই ছাত্রঋণের কিস্তি পরিশোধ পুনর্বহাল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উইসকনসিন মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিক হিলম্যান বলেন, করোনা মহামারির সময় বেকারত্বের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতার খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই হায়ার এডুকেশন রিলিফ অপরচুনিটিজ ফর স্টুডেন্টস অ্যাক্ট অব ২০২৩ এর আওতায় সরকার প্রশাসনিক ক্ষমা বাবদ কোটি কোটি ফেডারেল ডাইরেক্ট স্টুডেন্ট লোন নিয়োগ করেছিল এবং তাদের সুদের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। অথচ কোভিড ইমার্জেন্সি সমাপ্তির পর সরকার স্টুডেন্ট লোন পরিশোধ বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলায় বর্তমানে লেজে-গোবরে দশার উদ্ভব হতে চলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কর্মীদের বিশ্বাস, ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া পুনর্বহাল, সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্টে রুজুকৃত চ্যালেঞ্জের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রঋণের সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডলার মওকুফ বিলোপ পরিকল্পনা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের দুর্ভোগের আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করবে।

এদিকে ঋণ পরিত্রাণ কর্মসূচি বাতিল সংশ্লিষ্ট এক বিলে বাইডেন ভেটো দিয়েছেন এবং কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টের ভেটো নাকচের সম্ভাবনাও নিতান্তই ক্ষীণ বলে জানা গেছে। যাহোক, শিক্ষা বিভাগের মুখপাত্র বলেন, অনস্বীকার্য যে ঋণ পরিশোধ পুনর্বহাল ঋণগ্রহীতাদের চরম দুর্বিপাকে ফেলবে। তবে শিক্ষা বিভাগ ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মূলত গত তিন বছর ছাত্রঋণ পরিশোধের প্রয়োজন পড়ায় অনেক আমেরিকান মাসিক কিস্তি পরিশোধের অর্থ তালিকাভুক্ত না করেই পারিবারিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বা বাজেট তৈরি করেছিলেন। এবার ঋণগ্রহীতা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে কিস্তি পরিশোধ বাবদ গড়ে মাসে ১৬০ ডলার পারিবারিক বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে ছাত্রঋণের কিস্তি পরিশোধের বাড়তি বিড়ম্বনা কমপক্ষে ২৫ শতাংশ আমেরিকানের সুখের সংসারে অশান্তির পদচারণ ঘটাবে বললে হয়তো বাড়িয়ে বলা হবে না।