ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলজুড়ে প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। জেলায় জেলায় প্রস্তুতি সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করার সিদ্ধান্ত হয়। কয়েকটি জেলায় সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

১২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৬২ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।

সেন্টমার্টিনের সব ট্রলার সরানো হয়েছে

টেকনাফ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

টেকনাফের ইউএনও মো. কামরুজ্জামন জানান, টেকনাফে মোখার তেমন প্রভাব পড়েনি এখনও। সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফ উপজেলায় ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনের জন্য শুকনো খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণের পাঠানো হয়েছে।

“অবস্থার অবনতি হলে প্রয়োজনে উপকূলের মানুদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।”

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনে ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানকার আবহাওয়া এখনও ভালো রয়েছে। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি এখনও হয়নি।

“ইউনিয়ন পরিষদের একটি টিম, রেড ক্রিসেন্টের লোকজন ও দ্বীপে দায়িত্ব থাকা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। অবস্থা খারাপ হলে প্রয়োজনে দ্বীপের সকলকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।”

সেন্টমাটিন বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জরুরি কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি ট্রলার ছাড়া সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সব ধরনের ট্রলার কূলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কয়েকটি ছাড়া মালিকপক্ষ সব ধরনের ট্রলার নিরাপদে রাখার জন্য টেকনাফে নিয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। উপকূলে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

নোয়াখালীতেও সরকারি কর্মকচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৬৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সিপিপির ৮ হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া নগদ ৯ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা, ৩৮২ মেট্রিক টন চাল ও ২৪৩ বান্ডিল টেউ টিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।