সিরাজগঞ্জে মেয়রের সমর্থকদের ওপর এমপির লোকজনের হামলা, আহত ১০

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় স্থানীয় এমপি ও মেয়র গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে বলে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন জানান।

আহতদের মধ্যে বেলকুচি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিপন আহমেদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ছাড়া যুবলীগ সদস্য রিপন চক্রবর্তী, আওয়ামী লীগের পাভেল, মনসুর আহাম্মেদ, শ্রমিক লীগের মোতালেব সরকার, সাব্বির হোসেন, নাবিন মণ্ডল, আব্দুস সালাম, রতন, ওমর ফারুক স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমপির পক্ষের লোকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন স্থানীয় দুই সাংবাদিক।

দলটির একাধিক স্থানীয় নেতা জানান, বিকালে বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাসহ নেতা-কর্মীরা পার্টি অফিসের সামনে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় সেখানে পুলিশ আসে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এমপি মমিন মণ্ডলের ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকারের নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জনের একটি গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে মিটিং করতে চায়। এ সময় মেয়র পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।

এ অবস্থায় এমপি সমর্থকরা থানার ওসির সামনেই তার সমর্থকদের মারপিট করে বলে বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা অভিযোগ করেন । বাধা দিতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে এমপির সমর্থকরা মিছিল নিয়ে চালা গ্যারেজ এলাকায় পত্রিকার এজেন্ট দৌলত মণ্ডলের দোকান ভাঙচুর করে এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিপন আহমেদকে হাতুড়িপেটা করে।

মিছিলের ভিডিও সংগ্রহ করতে গেলে একাত্তর টিভির বেলকুচি সংবাদ সংগ্রাহক উজ্জ্বল অধিকারীকে মারপিট করা হয়।

দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বেলকুচি প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক বাবু বলেন, “আমিসহ চার সাংবাদিক দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে কয়েকজন এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে; এক পর্যায়ে আমার উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা চলে যায়। মিছিল নিয়ে বের হয়ে তারা সাংবাদিক উজ্জ্বল অধিকারীকে মারপিট করে।”

বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, “বিকালে পার্টি অফিসের সামনে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে পিএস সেলিমের নেতৃত্বে বেলকুচি থানার ওসির সহযোগিতায় এমপির লোকজন বাটাম দিয়ে আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে।”

তবে হামলার কথা অস্বীকার করে সেলিম সরকার বলেন, “দলীয় কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভায় অংশ নিতে গেলে মেয়র গ্রুপ আমাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় কার্যালয়ে থাকা বন্ধবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাঙচুর করা হয়।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানূর বিশ্বাস বলেন, “সাবেক সেক্রেটারি ফজলুল হক সরকার বিভিন্ন ওয়ার্ড নেতাদের ফোন করে পার্টি অফিসে মিটিংয়ের জন্য ডেকেছিলেন। বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাকে ফোন দিয়ে বললাম, দলের সভাপতি এমপি মমিন মণ্ডল দেশের বাইরে, আমিও ঢাকায় রয়েছি। আপনি তো দলের কোনো নেতা নন, তবে মিটিং ডাকছেন কেন?

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার বলেন, “এমপিকে তোরণ সরাতে মেয়র নোটিস দিয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে সভা ডাকা হয়। দলের নারী কর্মীরা সাড়ে তিনটায় আসেন। কিন্তু আগেই মেয়রের লোকজন এসে তাদের ঢুকতে বাধা দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় এমপির লোকজন এলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর আমরা প্রতিবাদ সভা করেছি।”

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, “বেলকুচিতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কথা শুনেছি। বিস্তারিত জানার জন্য চেষ্টা করছি।”

এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এখনও কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কেউ আটকও হয়নি।