ওমর ফারুকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে ব্যাট-স্ট্যাম্প

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরের ওমর ফারুকের তৈরি ক্রিকেট খেলার ব্যাট-স্ট্যাম্প এখন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ ক্রীড়াসামগ্রী তৈরি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। শুধু তা-ই নয়, তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে বেশকিছু লোক। তারাও এখন অর্থনৈতিকভাবে ভালো রয়েছেন।

সদর উপজেলার কানাইপুর বাজার সংলগ্ন সিনেমা হল পট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিরামহীনভাবে ঘুরছে যান্ত্রিক মটরের চাকা। সেখানেই কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট খেলার অন্যতম উপাদান স্ট্যাম্প ও ব্যাট। ৭-৮ জন শ্রমিক কেউ কাঠের মাপ ঠিকঠাক করে সাইজ করছেন, কেউ যন্ত্রচালিত মেশিনের সামনে নিয়ে জড়ো করছেন, কেউ আবার ওই কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন স্ট্যাম্প আর ব্যাট। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ওমর ফারুকের সঙ্গে।

স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের ছেলে ওমর ফারুক। বয়স ত্রিশোর্ধ্ব। কাজের সন্ধানে ৯৪ সালে গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। সেখানে বেশ কয়েক বছর ক্রীড়াসামগ্রী তৈরির কাজ শিখে চলে আসেন এলাকায়।

লেখাপড়া না জানা ওই যুবক ছোট পরিসরে একটি মেশিন দিয়ে গড়ে তোলেন কারখানা। দিন-রাত পরিশ্রম করে ক্রিকেটের ব্যাট-স্ট্যাম্প তৈরি করে ছুটে যেতেন জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায়। নিজের তৈরি ক্রীড়াসামগ্রীর বাজার ধরতে বিভিন্ন দোকানে ধরণা দিতেন।

আরও পড়ুন > সংসার বিবাগী এক শিক্ষকের গল্প

সেই ওমর ফারুকের দিন পাল্টে গেছে। এখন তাকে আর ছুটতে হয় না এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। কারখানায় বসেই অর্ডার পাচ্ছেন। দিনরাত ৭-৮ জন শ্রমিক মিলে কাজ করেও শেষ করতে পারছেন না অর্ডার।

ওমর ফারুক জানান, চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়ে কাজের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রকারভেদে প্রতিটি ব্যাট বিক্রি হয় ১২০-২৮০ টাকা। আর স্ট্যাম্প প্রতি একশ’ বিক্রি হয় ২৫০০-২৮০০ টাকা দরে।

তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোক ছিল তার। কিন্তু দরিদ্রতা তাকে সেই পথে বেশি দূর যেতে দেয়নি। বাধ্য হয়েই কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে অন্যের ক্ষেতে কাজ করতে হতো। তবে সেই কাজ বেশিদিন করতে পারেননি। কারণ ওই কাজে মন বসেনি তার। ফলে কাজের সন্ধানে ছুটে যান রাজধানীতে।

তিনি জানালেন জীবনে প্রবল ইচ্ছার কথা, ‘আমি স্ট্যাম্প ও ব্যাট তৈরি করে দেশের বহু জেলায় সরবরাহ করি। সেই ক্রীড়াসামগ্রী দিয়ে প্র্যাক্টিস করে তৈরি হচ্ছে ভালো ভালো খেলোয়াড়। বহুদিনের ইচ্ছা, সুযোগ পেলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য তৈরি করবো এক সেট ব্যাট-স্ট্যাম্প।’

কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পড়ালেখা না জানা যুবকও যে উদ্যোক্তা হতে পারে, তার নজির কানাইপুরের ওমর ফারুক। তার চেষ্টায় সে নিজে ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের করেছেন স্বাবলম্বী। তিনি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।’

কানাইপুরের স্কুলশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওমর ফারুক দরিদ্রতাকে জয় করে নিজে ও প্রতিষ্ঠানের অন্যদের স্বাবলম্বী করেছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন।’