সিরিজ জিতে মুশফিক ফিরিয়ে আনলেন ‘টাইমড আউট’ বিতর্ক

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ডার্বিতে রূপ নিয়েছে। এমন ম্যাচে ঠিক যে ধরনের উত্তেজনা, বিতর্ক সঙ্গী হয়ে থাকে; তেমন রসদে পরিপূর্ণ থাকে দুই দলের লড়াই। প্রতিবার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যার সর্বশেষটি ঘটে গেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপে।

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের ‘টাইমড আউট’ কাণ্ডে এই লড়াই রূপ নিয়েছিল মহারণে। দিল্লি হয়ে সিলেট, চট্টগ্রাম; ভেন্যু বদল হলেও সেই ঘটনার রেষ ঘুরে ফিরে থেকেছে প্রতিটি জায়গায়। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ট্রফি হাতে সেই ‘টাইমড আউট’কাণ্ডের বদলা নিয়েছিল শ্রীলঙ্কান দল। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সেই বিতর্কিত ঘটনার এটাই বুঝি শেষ! কিন্তু সোমবার রিশাদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ‘টাইমড আউট’ বিতর্কটা  এবার চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনলেন মুশফিকুর রহিম।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অলিখিত ফাইনাল ম্যাচে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দল যেন হয়ে ওঠে ছোটখাটো হাসপাতাল। মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, জাকের আলী অনিক ও এনামুল হক বিজয়রা নানা সময়ে ইনজুরিতে পড়েছেন। কারও অবস্থা গুরুতর ছিল না। তবে তীব্র রোদের কারণে বেশিরভাগ ক্রিকেটারের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। একই কারণে অনফিল্ড আম্পায়ারেও বদল আনতে হয়েছে!

সিলেটে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রেকর্ড সাতটি ছক্কা মেরে ৫৩ রানের ইনিংস খেলা রিশাদ আগের দুই ওয়ানডেতে সুযোগ পাননি। সোমবার তাইজুলের বদলে সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চেনালেন আবার। দারুণ বোলিংয়ের পর মাত্র ১৮ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়টা নিশ্চিত করেছেন তিনি।

সোমবার দিনের আলোতে ম্যাচ হওয়ায় রোদের তীব্রতা ছিল অনেক। এর মধ্যেও চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে দারুণ বোলিং করে শ্রীলঙ্কাকে ২৩৫ রানে অলআউট করে স্বাগতিকরা। জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওপেনিংয়ে পাঠায় তানজিদ তামিম ও এনামুল হক বিজয়কে। সঙ্গে দেখা যায় ফিল্ড আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটেলবোরোকেও উঠে যেতে! তার বদলে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব সামাল দেন তানভীর আহমেদ।

ফিল্ডিংয়ে নেমে ওপেনিংয়ে সৌম্যর বদলে তানজিদ তামিমকে দেখে শুরুতেই বিস্মিত হয় লঙ্কানরা! আম্পায়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান কনকাশন সাব হিসেবে তামিম ব্যাটিংয়ে।

২৩৬ রানের জবাবে খেলতে নেমে এনামুল কিছুটা স্লো শুরু করলেও তামিম আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে চড়াও হতে থাকেন। ৫০ রানের জুটির পর ২২ বলে ১২ রান করে আউট হন এনামুল। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তও ১ রানে বিদায় নিলে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে ৯৯ রানের জুটি গড়ে সেই চাপ কাটিয়ে উঠেন জুনিয়র তামিম।

তাওহীদ ৩৬ বলে ২২ রান করে আউট হলে ভাঙে জুটি। স্কোরবোর্ডে আরও ১৭ রান যোগ হতে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন কুমারা। এরপর দারুণ খেলতে থাকা তামিম বিদায় নিলে চাপে পড়ে স্বাগতিক দল।

ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন তানজিদ। তাতে ৮১ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৪ রানের ইনিংসে থেমেছেন তিনি!

তামিম আউট হওয়ার পর ম্যাচটা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের জন্য। মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৪৮ রানের জুটি দলকে এগিয়ে নেয় কিছুটা। তবে হাসারাঙ্গাকে ছক্কা মারতে গিয়ে মিরাজ যখন আউট হন, অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। তখনো রান বাকি ৫৮, হাতে উইকেট চারটি। কিন্তু দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দেন রিশাদ হোসেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নিমিষেই ম্যাচটি শেষ হয়ে যায়। মুশফিক-রিশাদের ২৫ বলে ৫৯ রানের জুটিতে ৪৮ রানই নিয়েছেন রিশাদ। হাসারাঙ্গাকে প্রথম বলে ছক্কা দিয়ে শুরুটা করেছিলেন। ওই ওভারে মারেন আরও একটি করে চার ও ছক্কা। লঙ্কান লেগ স্পিনে পরের ওভাবে সাগরিকায় ঝড় বইয়ে দেন বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার। তিন চার ও দুই ছক্কায় ওভার থেকে নেন ২৪ রান। পরের ওভারে মুশফিকের ব্যাটের কানায় লেগে চার হতেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ।

ম্যাচ জেতার পর মাঠেই বুনো উদযাপন করেছেন মুশফিক। তবে উদযাপন হয়েছে নাটকীয় কায়দায়। ট্রফি নিয়ে উদযাপনের সময় মুশফিকের হাতে দেখা গেল হেলমেট। স্ট্র্যাপটা খোলা। উপস্থিত সবাইকে ইঙ্গিত করে বোঝালেন স্ট্র্যাপটাতে সমস্যা। পাশ থেকে অবাক হওয়ার ভঙ্গি করলেন অধিনায়ক নাজমুল। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর গত বিশ্বকাপে ঘটে যাওয়া টাইমড-আউট বিতর্কটাকে সিলেটে টেনে এনেছিলেন ম্যাথুজ। এবার ওয়ানডে সিরিজ জিতে বিতর্কটা চট্টগ্রামে পুনরুজ্জীবিত করলেন মুশফিক।

বরাবরের মতো এই ম্যাচেও টস ভাগ্য সঙ্গী ছিল শ্রীলঙ্কার। তবে টস জিতে ব্যাটিং নিলেও বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে তারা। স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩৫ রানে থেমেছে। লঙ্কানদের হয়ে একাই লড়াই করেছেন জানিথ লিয়ানাগে। ১০২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় লঙ্কান এই ব্যাটার খেলেছেন ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস। এর বাইরে চারিথ আসালাঙ্কা ৩৭ ও কুশল মেন্ডিস ২৯ রানের ইনিংস খেলেছেন।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সৌম্য ও রিশাদ নেন একটি করে উইকেট।